নিষিক্ত ডিম্বাণু ধীরে ধীরে ডিম্বনালি বেয়ে জরায়ুর দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় নিষিক্ত ডিম্বাণুর কোষ বিভাজন বা ক্লিভেজ (cleavage) চলতে থাকে। কোষ বিভাজনের শেষ পর্যায়ের গঠন্মুখ ভ্রূণ ডিম্বনালি থেকে জরায়ুতে পৌঁছায়। এ পর্যায়ে ভ্রুণকে ব্লাস্টোসিস্ট (Blastocyst) বলে। জরায়ুতে এর পরে যে ঘটনাবলির অবতারণা হয়, তা ভ্রূণ গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্লাস্টোসিস্টের পরবর্তী পর্যায়গুলো সম্পন্ন হওয়ার জন্য ভ্রূণকে জরায়ুর প্রাচীরে সংলগ্ন হতে হয়। জরায়ুর প্রাচীরে ভ্রূণের এ সংযুক্তিকে ভ্রুণ সংস্থাপন (Implantation) বা গর্ভধারণ বলে। জরায়ুর অন্তঃগাত্রে সংলগ্ন অবস্থায় ভ্রূণটি বাড়তে থাকে এবং ধীরে ধীরে মানবশিশুতে পরিণত হয়। জরায়ুর অন্তঃগাত্রে ভূণের সংস্থাপন হওয়ার পর থেকে শিশু ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত সময়কে গর্ভাবস্থা বলে। এ সময় মাসিক বা রজচক্র বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত 38-40 সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভাবস্থা বিদ্যমান থাকে।
অমরা (Placenta)
যে বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে মাতৃ জরায়ুতে ক্রমবর্ধমান ভ্রূণ এবং মাতৃ জরায়ু-টিস্যুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাকে অমরা বা গর্ভফুল বলে। ভ্রুণ জরায়ুতে পৌঁছানোর 4-5 দিনের মধ্যে সংস্থাপন সম্পন্ন হয়।ক্রমবর্ধমানশীল ভ্রূণের কিছু কোষ এবং মাতৃ জরায়ুর অন্তঃস্তরের কিছু কোষ মিলিত হয়ে ডিম্বাকার ও রঞ্জনালিসমৃদ্ধ এই অমরা তৈরি করে। নিষেকের 12 সপ্তাহের মধ্যে অমরা গঠিত হয়। এভাবে ভ্রুণ এবং মাতৃ জরায়ুর অন্তঃস্তরের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য অস্থায়ী অঙ্গ তৈরি হয়। প্রসবের সময় অমরা দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যায়।
অমরার সাহায্যে ভ্রুণ জরায়ুর পায়ে সংস্থাপিত হয়। ভ্রুণের বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের দরকার। শর্করা, আমিষ, স্নেহ, পানি এবং খনিজ লবণ ইত্যাদি অমরার মাধ্যমে মায়ের জন্ত থেকে ভ্রুণের রন্তে প্রবেশ করে। অমরা অনেকটা ফুসফুসের মতো কাজ করে। অমরার মাধ্যমে ভ্রুণ মায়ের রস্ত থেকে অক্সিজেন গ্রহণ এবং ভ্রুণ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। অমরা একই সাথে বৃষ্ণের মতো কাজ করে। বিপাকের ফলে যে বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় তা অমরার মাধ্যমে ভূণের দেহ থেকে অপসারিত হয়। অমরা কিছু পুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে। এ হরমোন ভ্রুণের রক্ষণাবেক্ষণ ও তার স্বাভাবিক গঠনে সাহায্য করে।
অমরাতে প্রচুর রক্তনালি থাকে। অমরা, আম্বিলিকাল কর্ড দ্বারা লুণের নাভির সাথে যুক্ত থাকে। একে নাড়িও বলা হয়। এটা মূলত একটি নালি, যার ভিতর দিয়ে মাতৃদেহের সাথে ভূণের বিভিন্ন পদার্থের বিনিময় ঘটে। গর্ভাবস্থায় অমরা থেকে এমন কতগুলো হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন এবং প্রসব সহজ করতে সহায়তা করে।
ভ্রুণ আবরণী (Foetal membranes)
প্রত্যেক প্রজাতিতে ভ্রুণের জন্য মাতৃদেহের ভিতর সহজ, স্বাভাবিক এবং নিরাপদ পরিবর্ধনের ব্যবস্থা হিসেবে ভূণের চারদিকে কতগুলো ঝিল্লি বা আবরণ থাকে। এগুলো ভূণের পুষ্টি, গ্যাসীয় আদান-প্রদান,
বর্জ্য নিষ্কাশন ইত্যাদি কাজে সহায়তা করে। ভ্রুণ আবরণীগুলো ক্রমবর্ধনশীল ভ্রুণকে রক্ষা করে এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়।
ভ্রূণ মাতৃগর্তে পড়ে প্রায় 40 সপ্তাহ অবস্থান করে। ঐ একই সময়ে পর্যবর্তী মায়ের অগ্র পিটুইটারি ও অমরা থেকে হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়। প্রসবের পূর্বে জরায়ু নির্দিষ্ট ব্যবধানে সংকুচিত হতে থাকে এবং ব্যথা-বেদনার সৃষ্টি হয়। এই ক্রমবর্ধমান বেদনাকে প্রসববেদনা (Labour pain) বলে। প্রসবের শেষ পর্যায়ে ভ্রুণের বাইরের পর্দাগুলো ফেটে যায়। এর ভিতরের তরল বাইরে নির্গত হয়। এক পর্যায়ে শিশু ভূমিষ্ঠ হয়।
common.read_more